আল আমিন মুন্সী, নরসিংদীঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্যও। ইতোমধ্যে এসব আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও মিলছে। এসব আসন গুলোতে ঘুরে স্থানীয় নেতাকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ভোটটারদের সাথে কথা বললে অনেকেই জানান নৌকার জয়ে বাধা হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ইগল। এক কথায় নৌকার ভোট ইগলের থাবায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষ করে নরসিংদী-১ আসন,নরসিংদী-৩ আসন ও নরসিংদী-৪ আসনে নৌকার জয়ে বড় বাধা হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ইগল। তাদের মধ্যে নরসিংদী-১ সদর এ আসনে এবারও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন (নৌকা) পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক)। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইগল প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী
বলে মনে করা হচ্ছে। এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন আরও দুজন। তারা হলেন মো. জাকারিয়া, স্বতন্ত্র, (প্রতীক ট্রাক) ও জাতীয় পার্টি মো. ওমর ফারুক ভূইয়া (লাঙ্গল)। এ আসনে নৌকা ও ঈগলের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন (নৌকা) পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। এ আসনে ভোটের মাঠে থাকছেন জাতীয় পার্টির রফিকুল আলম সেলিম (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাসুম বিল্লাহ (ঈগল) ও ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী আফরোজা সুলতানা (দোলনা) । যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী আফরোজা সুলতানা ইতিমধ্যে তার স্বামী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে (নৌকা) সমর্থন দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করছেন। এখানে নৌকার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়াই করার মতো কোনো শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে নৌকার বিপক্ষে সুযোগ নিতে চায় জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে রফিকুল আলম সেলিম। এছাড়া নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে ভোটযুদ্ধে নামা দুজন সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন- নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু (প্রতীক ঈগল) এবং নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে নৌকা পেলেন না বর্তমান সংসদ সদস্য মো. জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। তিনি দুইবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মনোনয়ন পাননি সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরনের ছেলে ফজলে রাব্বি খান। রাজনৈতিক পরিবারে এবার নৌকার মনোনয়ন পেলেও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার তরুণ মাঝি ফজলে রাব্বি খান। এমনই ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা। সাধারণ ভোটটারদের ধারণামতে নৌকার অনেক ভোট ইগলের থাবায় চলে যেতে পারে। অন্যদিকে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। মনোহরদী-বেলাব উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে শিল্পমন্ত্রীর সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দলও। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত মনোহরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম খান বীরু। সাইফুল ইসলাম খান বীরুর স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার মাঝি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এখানে মন্ত্রীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান বীরুর। এ ছাড়া এ আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন এমদাদুল হক ভুলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (প্রতীক ঘুড়ি) ও মো. কামাল উদ্দিন জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল)। একই দশা হতে পারে নরসিংদী-৫ রায়পুরা আসনেও। এখানে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ৫ বারের সংসদ সদস্য সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। রায়পুরার উন্নয়নে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর অবদান অনস্বীকার্য হলেও দলীয় কোন্দল, চরাঞ্চলের সংঘাতসহ নানা কারণে তিনি কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনযুদ্ধে নেমেছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী। এখানে নৌকার সঙ্গে ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ আসনে ভোটের মাঠে আছেন মো. সোলেমান খন্দকার (স্বতন্ত্র, কাচি)।
#