
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, আমার এই বিষয়টা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত ছিল। রাজনৈতিকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমাকে বা বিএনপির প্রার্থীকে এখানে বসতে দেওয়া হবে না।
এখানে তাদের পছন্দসই প্রশাসককে বসাবে এবং সেই প্রশাসককে বসানোর মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করবে। এটি তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
সোমবার (১৬ জুন) নগর ভবনের সামনে চলমান আন্দোলনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক যখন আমার মেয়রের গেজেটকে চ্যালেঞ্জ করে যে রিট করা হয়েছিল সেটিকে যখন নিষ্পত্তি করে গেজেটটিকে বহাল রাখা হয়েছে সেই মুহূর্ত থেকে বর্তমান প্রশাসক অবৈধ হয়ে গিয়েছে। এটাই হলো বাস্তব। এখানে প্যারালাল প্রশাসন তারা চালাচ্ছিল। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি এবং আইনের মাধ্যমে আদালতের মাধ্যমে আমার যে বর্তমান অবস্থান সেটাকে প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারীর বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার উপরে অভিযোগ দুদক এখন তদন্ত করছে। তো সেই সব কর্মকাণ্ড যারা করেছে, তারা অবৈধ আমি অবৈধ না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের যে রায় সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বৈধ নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমাকে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত আমার শপথ গ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। যার কারণে আমরা ঈদ পরবর্তীতে গতকাল থেকে আমাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি বিরতিহীনভাবে ঘোষণা করেছি। তারই অংশ হিসেবে আজকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বস্তরের জনগণ নগর ভবনে এসেছে এবং তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু আপনারা জানেন যে দীর্ঘদিন এই আন্দোলন চলার ফলে বিভিন্ন ধরনের যে নাগরিক সেবা সেই বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। আন্দোলনের শুরু থেকে সমস্ত জরুরি সেবা কিন্তু চলমান ছিল এবং সেটা আমাদের সিদ্ধান্তে আমরাই নিশ্চিত করেছি যেসব জরুরি সেবা রয়েছে সেগুলো যাতে চলমান থাকে। অর্থাৎ, আমাদের আন্দোলনের কারণে জনগণের দুর্ভোগ তো হচ্ছেই, কিন্তু সেটি যাতে চরম আকারে না পৌঁছায়।
তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই জানেন যে কিছুদিন যাবত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। যার কারণে আগামী দিনগুলো ঢাকা শহরকে নিরাপদ রাখার জন্য মশক নিধন নিয়ন্ত্রণের যে কর্মসূচি রয়েছে নগরভবনের সেটিকে বেগবান করার জন্য এবং সেটি যাতে চলমান থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা আজকে থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছি। আজকে আমরা ৭০টির অধিক ওয়ার্ডের কনসারভেন্সি ইন্সপেক্টর অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে বসেছি। তাদের আমরা উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছি এবং তাদের আমরা নিশ্চিত করেছি যে, ভবিষ্যতে তাদের যে বিভিন্ন সমস্যাগুলো রয়েছে আমরা সেগুলো দেখব। এর পাশাপাশি তাদের আমাদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়েছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যাতে আমরা নগরীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আরও বেশি রাখতে পারি এবং কোথাও যাতে ডেঙ্গুর প্রজনন স্থল হয়ে না উঠে সেটা নিশ্চিত করার জন্য মশক নিধনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের সঙ্গে তারাও কাজ করে যাবে এবং কোথাও যাতে পানি জমে থাকার ফলে এডিস মশার যে প্রজনন সেটি না ঘটে সেটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের আমরা দিক নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীকালকে আমরা ৭০টির অধিক ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে আমাদের দেখা করার কথা রয়েছে। আমরা গতকালকে বলেছিলাম দৈনন্দিন যে সেবাগুলো রয়েছে সেগুলোকে আমরা পুনরায় চালু করতে চাচ্ছি কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
আন্দোলনের মধ্যে সিটি করপোরেশনের কাজগুলো যেই পদ্ধতিতে হবে সেটি তুলে ধরে তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সার্টিফিকেট এ আবেদনগুলো ওয়ার্ড কার্যালয়ের ওয়ার্ড সচিবদের মাধ্যমে জমা নেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে সেগুলোকে প্রক্রিয়া করে তাদের দেওয়া হবে। যাতে আমাদের এ আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় নগরবাসীর যে দুর্ভোগ বা তাদের যে অসুবিধা সেটিকে যাতে আমরা কমিয়ে আনতে পারি, সর্বোচ্চ কম পর্যায়ে রাখতে পারি সেটি হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। আগামী পরশুদিন আমরা নগরভবনের স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করব। এর পাশাপাশি আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের মনিটরিং কমিটি গঠন করব এবং এ মনিটরিং কমিটিতে আমাদের মেয়র সেলের যে কন্ট্রোল রুম রয়েছে সেই কন্ট্রোল রুমে সরাসরি ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং মনিটরিং করা হবে যাতে তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে এবং এ বিস্তারে যাতে আমরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি।
সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, তারা যাতে আর জনদুর্ভোগ না বাড়িয়ে, আর কালক্ষেপণ না করে আমাকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেন এবং নগরবাসীর যে দুর্ভোগ, দীর্ঘদিন যাবত যে নগরভবন একটি অচল অবস্থার মধ্যে রয়েছে, সেটি যাতে দ্রুত সময়ে আমরা চালু করতে পারি। এ অচল অবস্থা যাতে কেটে যায় এটি আমরা সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। অতএব, সরকারের উচিত হবে তারা যদি তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চায়, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ যদি মনে করে যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং সেটি যদি জনগণকে তারা বিশ্বাস করাতে চায় তাহলে আমি তাদের অনুরোধ জানাবো তারা যাতে দ্রুততম সময়ে এ শপথ গ্রহণের যে অনুষ্ঠান সেটিকে বাস্তবায়ন করে। আর অন্যথায় এ আন্দোলনটা আমরা চালিয়ে যাবো।