আজ শনিবার, ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ গ্রীষ্মকাল, ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

শনিবার, জুন ১৪, ২০২৫
দেশজুড়েচলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে আকাশ হত্যার বিচারের দাবি

চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে আকাশ হত্যার বিচারের দাবি

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গাফফার আলী ওরফে আকাশ হত্যার বিচারের দাবিতে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ ট্রেন উথলী রেলস্টেশনে আটকিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন পরিবারসহ এলাকাবাসী।

রোববার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জীবননগর উপজেলার উথলী রেলস্টেশনে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন আটকিয়ে বিক্ষোভ ও  মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধন শেষে ৯টা ৩৩ মিনিটে ট্রেনটি উথলী স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। এর আগে ৩০ মিনিট ট্রেন আটকে রাখেন এলাকার সাধারণ জনগণ এবং ট্রেন পরিচালকের হাতে রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার পশ্চিম বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তারা।

অভিযোগপত্র গ্রহণ করা ট্রেন পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাব এবং যথাস্থানে অভিযোগপত্রটি পৌঁছে দেব।

মানববন্ধনে আকাশের বাবা জিন্নাত আলী বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

আকাশের মা বলেন, আমার ছেলে অন্যায় করতে পারে না। সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

গত ২১ মে কপোতাক্ষ ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ি ফেরার পথে জয়রামপুর আখ সেন্টারের কাছে রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল গাফফার আলী আকাশ (২৬) নামে এক যুবকের মরদেহ। এলাকাবাসীর ধারণা ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

আকাশ জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের জিন্নাত আলীর একমাত্র ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

আকাশের মৃত্যুর দুই দিন পর মৃত্যুর ঘটনার নতুন মোড় নেয়। পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।

পরিবারের দাবি, একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে নিছক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিইসহ রেলওয়ে পুলিশ ও এটেনডেন্টরা আকাশকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে নিহত আকাশের পিতা জিন্নাত আলী দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় নিহত আকাশের পিতা জিন্নাত আলী বাদী হয়ে গত ২১ মে ওই ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিই লালন চক্রবর্তী (৪২), রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০), এটেনডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়াকে (৩৬) আসামি করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গাফফার আলী আকাশ অফিস শেষে প্রতিদিনের মতো কপোতাক্ষ ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। ঘটনার দিন কপোতাক্ষ ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিই, রেলওয়ে পুলিশ ও এটেনডেন্টরা টিকিট না কেটে উঠা যাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছিলেন এবং তাদের কাছে অবৈধভাবে অনেক টাকা দাবি করছিলেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় রেলওয়ে পুলিশসহ অন্যরা আকাশকে টেনে-হেঁচড়ে দরজার কাছে নিয়ে যায় এবং জয়রামপুর রেলস্টেশনের কাছে দরজা থেকে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এ মামলায় ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী সাক্ষীও প্রদান করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কপোতাক্ষ ট্রেনের একই বগিতে থাকা একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আকাশ হত্যার সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের কল রেকর্ড হাতে পাওয়া গেছে।

রেকর্ডে রাজশাহী থেকে ওঠা ওই ট্রেনের এক যাত্রী বলেছেন, আমরা ওই ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে ৭১নং সিটে বসেছিলাম। একপর্যায়ে দেখতে পাই লাল গেঞ্জি পরিহিত একটা ছেলেকে (আকাশ) বগিতে দায়িত্ব থাকা কয়েকজন লোক টেনে-হেঁচড়ে দরজার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দরজার কাছে নিয়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ওই ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ছেলেটার মাথা নিচের দিক দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে দুইজন পুলিশ উপস্থিত ছিল। তাদের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।

কল রেকর্ডে আরও শোনা যায়, তারা দর্শনা হল্ট স্টেশনে নামার পর ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা কাদের নামের এক পুলিশের কাছে জানতে চায়- ছেলেটার অপরাধ কী ছিল? পুলিশ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী উথলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি। আমাদের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শত শত নারী-পুরুষ সবার একটাই দাবি আকাশ হত্যার সুষ্ঠু বিচার।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন বিশ্বাস বলেন, এখানে আকাশ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হবে জেনে আমরা প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সকাল থেকে অবস্থান করছি। এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি; শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন
- বিজ্ঞাপন -spot_img

একটি মন্তব্য করতে পারেন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

- বিজ্ঞাপন -spot_img