রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘গুলিবর্ষণের ক্ষমতা’ চিরতরে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলন দমাতে গুলি করে হত্যার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনের জন্য গুলির ব্যবহার, শটগানের ব্যবহার চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে গতকাল সোমবার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রিজভী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬-১৭ বছর যেটা থেকে বঞ্চিত হয়েছি. জনগণ বঞ্চিত হয়েছে, সেই বঞ্চনার দুঃস্বপ্ন যাতে দূর হয়, সে জন্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটা তারিখ অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা সংস্কার কী কী হওয়া উচিত, সেটা বলেছি। সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া, এটা যুগ যুগ ধরে চলবে। জনগণের যে দাবি, এই দাবির ওপর ভিত্তি করেই তো সংস্কার হবে। কিন্তু তার জন্য নির্বাচন আটকে রাখার কোনো অর্থ হয় না।’
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য এক রক্তঝরা আন্দোলনে ১৬ বছর বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীর আত্মদান আর তাদের রক্তভেজা শার্টের বিনিময়ে আজকের এই পরিবেশ। আমরা একটি পর্যায় পার করেছি। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আমাদের আসতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
ভারতে থেকে শেখ হাসিনা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছেন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা তাঁর বর্বর শাসন ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় পেয়ে নানা ধরনের উসকানিমূলক কাজ ও চক্রান্ত করার জন্য তাঁর নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু জনগণের সাড়া না পেয়ে এখন তাঁরা হরতাল আর অবরোধ করছেন অনলাইনে। জনগণের মধ্যে তাঁরা যেতে পারছেন না।’
ব্রিটিশ মানবাধিকারবিষয়ক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ মানবাধিকারবিষয়ক রাষ্ট্রদূত এলিনর স্যান্ডার্সের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির দুই নেতা। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ অংশ নেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
তিন দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন এলিনর স্যান্ডার্স। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলিনর স্যান্ডার্স বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি করে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা, ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও শ্রমমান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যে প্রচেষ্টা, যুক্তরাজ্য তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
ব্রিটিশ দূত তিন দিনের সফরে বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, মানবাধিকার ও নাগরিকদের মৌলিক মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।