প্রিন্ট এর তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২, ২০২৫, ৪:০১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩, ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ
কুড়িগ্রামে মেয়েদের আত্মরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: সময়ের সঙ্গে নারীরাও এগিয়ে এসেছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তারা জীবনের প্রয়োজনে নানা কর্মমুখী কাজে জড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বাড়ির বাইরে। চলাফেরা করতে হয় একা একা। এ সময় বখাটে আর উত্ত্যক্তকারীরা সুযোগ পেলেই নানা রকম হয়রানি করে। এর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা শুধু শহরে নয় গ্রামে-গঞ্জে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে কিশোর অপরাধগুলো ভিন্ন রূপ আকার নিচ্ছে। এমতাবস্থায় এসব বখাটেকে বখাটেপনার জবাব দিতে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে শিখছে কারাতে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এ জেলার মেয়েরাও আর পিছিয়ে পড়ে থাকতে চায় না। তারা কারাতে কঠিন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এক সময় রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে কারাতে শিক্ষার প্রচলন থাকলেও হিমালয়ের পাদদেশীয় উত্তরের সর্বশেষ জেলা কুড়িগ্রামেও গড়ে উঠেছে কারাতে প্রশিক্ষণ একাডেমি।
সামাজিক বুলিং, হেয় আর তাচ্ছিল্যতাকে উপেক্ষা করে মেয়েদের আত্মরক্ষার্থে কারাতের ওপর এই নির্ভরশীলতার সংখ্যা এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে। অভিভাবকদের সদিচ্ছা আর মেয়েদের ইচ্ছা থেকেই গড়ে উঠেছে কারাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার কক্ষটিতে একদল শিক্ষার্থী সকাল-বিকেল নিজেদের আত্মরক্ষার্থে প্রশিক্ষণ নেয় কারাতের। এই প্রতিষ্ঠানে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। আর কক্ষের বাইরে অভিভাবকরা বসে নিজ সন্তানদের নানা কৌশল উপভোগ করেন। প্রতিদিন এখানে সকালে ও বিকেলে স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা আসেন কারাতে শিখতে। সকালের চেয়ে বিকেলে মেয়েরা আসে বেশি। তাদের শিক্ষণ দিচ্ছেন তিনজন কারাতে প্রশিক্ষক। নাম মাত্র ফি দিয়ে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে মিলে এখানে ৬২ জন কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যার মধ্যে মেয়েই রয়েছে ৩৫ জন।
এই একাডেমির মেয়ে শিক্ষার্থীরা জানায় কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের মনোবল আর দৃঢ় হয়েছে। মানসিকভাবে জোড় পেয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা করতে তারা সক্ষম। রাস্তায় চলাচলের সময় বখাটেরা যখন শিষ দেয় কিংবা বাজে মন্তব্য করে, তখন তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেও আত্মবিশ্বাস বাড়ছে মেয়েদের। পাশাপাশি কারাতের বিভিন্ন কৌশলগুলো শারীরিকভাবে তাদের মজবুত করছে।
কারাতে শিখতে আসা কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, আমি এখানে ১ মাস ধরে কারাতে শিখছি। প্রথম দিকে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করত। এসবকে পাত্তা না দিয়ে আমি এখানে নিয়মিত শিখছি। এতে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি হয়েছে আমার। মেয়েরা এখনো নানাভাবে প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। নিজের প্রতিরক্ষার জন্য আমার এটি শিখতে ভালো লাগে।’
একাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সিনিয়া আক্তার জিশা বলেন, ‘আমি এখানে ৩ বছর ধরে কারাতে শিখছি। শুরুর দিকে ছেলেদের সঙ্গে শিখতে হতো। এখন অনেক মেয়েরা আসে কারাতে শিক্ষতে সত্যি ভালো লাগার। আমি কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায় থেকে ব্লাক বেল্ট পেয়েছি। আমাদের সমাজের নিজের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এটি শেখা খুবই প্রয়োজন।’ আমি মনে করি দেশের প্রতিটি স্কুলে কারাতে শিক্ষার ব্যবস্থা হওয়া জরুরি। এতে মেয়েরা মানুষিক ও শারীরিকভাবে এগিয়ে যাবে। এতে ইভটিজিংয়ের স্বীকার কম হবে মেয়েরা।
৮ বছরের ছোট্ট শিশু ফারাহ হাসান সিয়াম বলেন, ‘আমি প্রতিদিন বিকেলে বাবার সঙ্গে এখানে আসি কারাতে শিখতে। কারাতে শিখতে খুব ভালো লাগে।’
অভিভাবক মো. মুরাদ জানান, আমাদের দেশটা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এই জেলার মেয়েরা আত্মরক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে এটা ঠিক না। একজন দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে প্রত্যেকের উচিত নিজেদের মেয়েদের কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া।’
আর এক অভিভাবক মোছাঃ রেশমা আক্তার জানান, ‘আমি একজন সচেতন মা হিসেবেই আমার মেয়েকে কারাতে প্রশিক্ষণ স্কুলে দিয়েছি। গত ৩ বছর ধরে শিখছে সে। এখন মেয়ের সঙ্গে নিঃসংকোচে যে কোনো জায়গায় যেতে পারি, নিজের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভয়টা আর কাজ করে না।’
কুড়িগ্রাম কারাতে ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক খাজা ইউনুস ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪৫ বছর ধরে কারাতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু মেয়েদের এতে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করিনি। গত ২ বছর ধরে ক্রমাগত স্টেডিয়ামে মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এখানে ৩৫ জন মেয়ে কারাতে শিখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ৩ জন প্রশিক্ষক রয়েছি। এখানকার শিক্ষার্থীদের দেওয়া ফি দিয়ে চলছে আমাদের বেতন ভাতা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে স্থায়ীভাবে আমাদের সম্মানী ভাতা দিলে আমরা এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারব। এ ছাড়াও পুরো কক্ষটি মিলে মাত্র ১টি কারাতে ম্যাট দিয়ে চলছে আমাদের প্রশিক্ষণ। আরও কিছু কারাতে ম্যাট পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ভালো হতো।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ‘কারাতে প্রশিক্ষণে মেয়েদের সংখ্যাটা বাড়ছে এটা কুড়িগ্রাম জেলার জন্য একটি ভালো দিক। মেয়েদের প্রশিক্ষণ নিতে কারাতে ম্যাটসহ যেসব বিষয়ে সংকট রয়েছে আমরা দ্রুত বিষয়গুলোর সমাধান করব।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোস্তাফিজুর রহমান মির্জা। বার্তা সম্পাদক: নাদিম হাসান মির্জা। বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): নূর মিয়া। দৈনিক দিনের কণ্ঠ মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক কমর লেন, ফকিরাপুল, ঢাকা-১২২৩ থেকে প্রকাশিত এবং টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, এসএসবি প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর: ০১৬৪৪৭৯০০৭৯, পিবিএক্স ০৯৬৩৮৮৪৩৪৬২, ই-মেইল: info@dinerkantho.com, news@dinerkantho.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। | www.dinerkantho.com