বিশেষ প্রতিনিধিঃ যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তারেককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের শান্তিবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, আজ সকালে শহরের কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসবের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জড়িত। এছাড়া ছাত্রদলের গ্রেপ্তার দুই নেতার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা আছে।
পুলিশ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে হরতালের সমর্থনে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হঠাৎ বিএনপি ও ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে সড়কে থাকা কয়েকটি ইজিবাইক ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ সেখানে গেলে তাঁরা পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে শহরের শান্তিবাগ এলাকার একটি বাসা ঘেরাও করে সেখানে অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ তারেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে জেলার সাত উপজেলায় মামলা হয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় সাতটি, ছাতক থানায় দুটি, তাহিরপুর থানায় দুটি, শান্তিগঞ্জ থানায় দুটি ও দোয়ারাবাজার, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও দিরাই থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। সব কটি মামলার বাদী পুলিশ। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এসব মামলায় আসামি হয়েছেন ১ হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে নাম উল্লেখ আছে ৪২৩ জনের। বাকি ৬৬৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামি। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫০ জনের বেশি।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলামসহ বিএনপির আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা, জেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আসামি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম তিনটি মামলার আসামি। একটি মামলায় আসামি আছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরীও। জেলার ছাতক থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর মো. শওকত, বিএনপির সহসভাপতি আনসার উদ্দিন, ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ওই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব খান, জেলা বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক রাকিব উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসিম চৌধুরী আছেন। তবে তাঁদের কেউ কেউ এখন জামিনে আছেন।
গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকেই বাড়িছাড়া। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যাঁকে পাচ্ছে, তাঁকেই গ্রেপ্তার করছে। তবু তাঁরা মাঠে আছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। মামলা, গ্রেপ্তারে আমাদের মাঠ থেকে সরানো যাবে না। আমরা মাঠেই থাকব।’