অনলাইন ডেস্কঃ গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ, ধ্বংসস্তূপ। বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে ধুলিমাখা রক্তাক্ত কোনো শিশু মুখ বের করে বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে বিশ্বকে। কত নিষ্ঠুর, কতটা নির্দয় দুনিয়ার মানুষগুলো! তাদের জীবনকে প্রকাশ্যে, সবার চোখের সামনে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে বর্বর ইসরাইল। বিশ্ববাসী, বিশ্ব নেতারা শুধু বিবৃতি, বৈঠকের পর বৈঠক করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় গাজায়, বিশেষ করে দক্ষিণ গাজায় অকাতরে মরছে মানুষ। এ পরিস্থিতিকে ‘নারকীয় দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা। তিনি ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবিক সহযোগিতা বিষয়ক কর্মকর্তা লিন হ্যাস্টিংস। সোমবার তিনি সতর্ক করেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ পর্যন্ত আটকে আছে। এতে সেখানে আরও ভয়াবহ নারকীয় দৃশ্য সৃষ্টি করবে।
বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি তাতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ দেয়া সম্ভব নয় বলে তার মন্তব্য।
ওদিকে ৭ই অক্টোবরের পর গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৬,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এখন যেসব হাসপাতাল নামকাওয়াস্তে কার্যকর আছে সেখানে লাশ রাখার আর জায়গা নেই। ফলে হাসপাতালের বাইরে, ট্রাকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মৃতদেহ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও অনলাইন এসব নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে।
সাত দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষে গাজার দক্ষিণে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। সেখানে ডজনের পর ডজন ট্যাংক ঢুকে পড়েছে। লিন হ্যাস্টিংস বলেছেন- ইসরাইলের হামলায়, অভিযানে দক্ষিণ গাজায় যে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদেরকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব মানুষ এক স্থানে কেন্দ্রীভূত হচ্ছেন। তাদের খাবার, পানি, আশ্রয়, নিরাপত্তা কিছুই নেই। তিনি আরও বলেন, গাজায় কোথাও এখন আর নিরাপদ নেই। মানুষের পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ফলে আরও ভয়াবহ এক নারকীয় দৃশ্যের অবতারণা হতে যাচ্ছে। এমন অবস্থা হলে সেখানে মানবিক কর্মকাণ্ড বা ওইসব মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গাজাবাসীর জন্য যে ‘সেফ জোন’-এর আহ্বান জানিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন কানাডিয়ান নাগরিক লিন হ্যাস্টিংস। কারণ, এমন নিরাপদ জোন তৈরি করা হলে সেখানে নড়াচড়া করতে পারবে না মানুষ। এমন নিরাপদ জোন মানবিক নয়। লিন হ্যাস্টিংস বলেন, আমরা এখন যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো কোনো ধারণ ক্ষমতা নেই এমন আশ্রয়শিবির, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, পরিষ্কার পানীয় পানির অভাব রয়েছে, যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যাবস্থা নেই, মানুষগুলো মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছে, তাদের পুষ্টি নেই। এসবই একটি মহামারী সৃষ্টির ফর্মুলা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপর্যয়কর। লিন হ্যাস্টিংস বলেন, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর দুটি বড় সড়কে জাতিসংঘের টিম এবং ট্রাক চলাচল সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, লিন হ্যাস্টিংস অবস্থান করছেন জেরুজালেমে। সত্যি কথা বলেন বলে গত সপ্তাহে তার ভিসা নবায়ন না করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরাইল। তারা বলেছে, তিনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন।
ওদিকে সোমবার ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। গাজায় এরই মধ্যে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা যাতে বৃদ্ধি পায় এমন কর্মকাণ্ড থেকে ইসরাইলকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, সাধারণ মানুষকে যেন আর দুর্ভোগে ফেলা না হয়। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক এমন আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতি। তবে জাতিসংঘ যতই আহ্বান রাখুক, ইসরাইল গাজায় তার অভিযান জোরালো করেছে। এতে লাশের সারি বাড়ছেই।
টাইমস অব ইসরাইল রিপোর্টে বলেছে, সোমবারও গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে ডজন ডজন ইসরাইলি ট্যাংক প্রবেশ করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) হামাসের সব অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত গাজার জাবালিয়া এবং শেজাইয়া এলাকা ত্যাগ করবে না। গোলানে অবস্থানরত সেনারা শেজাইয়াকে ঘিরে ফেলেছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের এই মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর চলমান অভিযান গাজা সিটিতে এবং উত্তরাঞ্চলে হামাসের সব কিছুকে ধ্বংস করে দেবে সহসাই। উত্তরে হামাসের যে পরিণতি হয়েছে সবখানে সেই একই পরিণতি হবে এবং তার চেয়ে চরম খারাপ হবে। আমাদের বিজয় ও লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবেই।
এই যুদ্ধে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী এজেন্সি বলেছে, এই যুদ্ধে গাজার কমপক্ষে ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তারা গাজার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ। জাতিসংঘের ২১১১ জন স্টাফ নিহত হয়েছেন। ওদিকে গাজার দারাজ এলাকায় দুটি স্কুলে আশ্রয় নেয়া মানুষদের ওপর ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন।