ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষাপটে পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার এবং বিশ্ববাণিজ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ‘গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা’ করছে ইরান।

দেশটির জাতীয় সংসদের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কোসারির বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।

প্রতিবেদন আল জাজিরার।

ওমান ও ইরানের মাঝামাঝি এই হরমুজ প্রণালী ওমান উপসাগর ও পারস্য উপসাগরকে সংযুক্ত করেছে। এটি তেল সরবরাহে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এই পথে সরবরাহ হয়। অর্থাৎ তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর তেলসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য বৈশ্বিক বাজারে এই প্রণালী দিয়েই পরিবহন হয়।

যদি এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলের দাম আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বা দাম বৃদ্ধির চাপ বাড়বে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানে ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত হরমজু প্রণালী বন্ধ হয়নি। তবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় এরই মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে ধাক্কা লেগেছে। বেড়ে গেছে তেলের দাম।

যদিও বাণিজ্যিক জাহাজ এখনো হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচল করছে। তবে এখন খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে তাদের চলতে হচ্ছে। ইরান আগে পশ্চিমাদের চাপের জবাবে এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল। এসব বিষয় বিশ্ববাজারে এক ধরনের শঙ্কার জন্ম দিয়েছে, যার ফলে তেলের দাম বেড়েছে।

ভূরাজনীতি বিশ্লেষক তৌফিক রহিম বলেন, ‘ইসরায়েল এখনো ইরানের তেল অবকাঠামোতে বড় ধরনের কোনো হামলা চালায়নি। যদি এই চিত্র বদলে যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে এর প্রভাব হবে অনেক বেশি নাটকীয়। ’

ম্যাক্রোইকোনোমিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএ রিসার্চের প্রধান ভূরাজনৈতিক কৌশলবিদ ম্যাট গার্টকেন আল জাজিরাকে বলেন, যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটাই হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তেল সংকট।

অনেকে মনে করেন, হরমুজ প্রণালী ইরান বন্ধ করে দিলে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররাও যুক্ত হয়ে যেতে পারে। কারণ তেলের দামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারসহ অর্থনীতি নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও গুরুতর দিকে যেতে পারে।

ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কাসহ দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব থেকে গতকাল শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে দেশটির বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় আগ্রাসনবাদী ইসরায়েল। এতে ৮০ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান, সেনাপ্রধান, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ শীর্ষ অনেক কর্মকর্তা ছিলেন।

রাতে এর পাল্টা জবাব দেয় ইরান। ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতে থাকে ইসরায়েলে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ-এর মুখপাত্র এভিসাই আদরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানান, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দুই দফায় একশোর চেয়ে কিছু কম ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদি বাহিদি দাবি করেন, অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি এর আওতায় তিনটি ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোতেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সেন্টার অবস্থিত।

শুক্রবারের পর শনিবারও দুপক্ষ পাল্টাপাল্টি আঘাত হানার দাবি করেছে।