
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বাবা। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে অন্তঃসত্ত্বা মাও। সেই দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছে পাঁচ বছর বয়সি উম্মে তুরাইফাও। দুর্ঘটনায় বাবা মারা গেছে শিশুটিকে এখনো জানানো হয়নি সেই তথ্য। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও জানানো হয়নি স্বামীর মৃত্যুর খবর। ঘটনাটি নাটোরের লালপুরের।
তুরাইফা নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের মৃত জাহিদ হাসান শান্ত (২৭) ও জেসমিন খাতুন (২৩) দম্পতির একমাত্র সন্তান।
গত ১৯ মে বাবা ও মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাবার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে গেছে তুরাইফার জীবন। এক দুর্ঘটনায় সুখী পরিবারে দুর্বিষহ নেমে এসেছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গ্রীন হ্যাভেন স্কুলের শিশু শ্রেণিতে পড়ে তুরাইফা। বাবার মোটরসাইকেলে করে স্কুলে যেত এ শিশু। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৯ মে বাবার মোটরসাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছিল তুরাইফা। সঙ্গে ছিল অন্তঃসত্ত্বা মাও।
তারা ঈশ্বরদী-বানেশ্বর আঞ্চলিক মহাসড়কের বানিয়াপাড়ায় পৌঁছালে বাঘা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুপার সনি বাস তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে বাবা ও মেয়ে উভয়ের ডান পা হাঁটু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে থাকা অন্তঃসত্ত্বা মা জেসমিনের ডান হাত ভেঙে যায়।
স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে তাদের প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বাবা ও মেয়ের অস্ত্রোপচার হয়। রামেকের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যেই গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাবা শান্তর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরটি এখনও জানানো হয়নি স্ত্রী জেসমিনকে। মারাত্মক আঘাতে এ নারীর হাত, কোমর ও পিঠের হাড় ভেঙে গেছে। অন্তঃসত্ত্বা এ নারীকে এখনও শঙ্কামুক্ত বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও নিজের পা হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছে তুরাইফা। নিজের ইচ্ছেমতো বন্ধুদের সঙ্গে হবে না আর ছোটাছুটি ও দৌড়ঝাঁপ। কখনো পূরণ হবে না বাবার সঙ্গে খুনসুঁটি কিংবা কোনো আবদার। পা হারিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বার বার বায়না ধরছে বাবার কাছে যাবার। অথচ, তুরাইফা এখনো জানে না তার বাবা আর কখনো ফিরবে না।
এদিকে, ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় শান্তর বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী এজাহার আলী। ছেলের মৃত্যু, নাতনির পা হারানো ও পুত্রবধূর মুমূর্ষু অবস্থায় শান্তর মা জামিরনও শোকে পাথর হয়ে গেছেন। বাক প্রতিবন্ধী বোন জোবাইদার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। ভাই হারানোর ব্যাথায় তিনি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে আত্মীয়দের শোকের মাতম।