মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ কৃষি সমৃদ্ধ জেলা মেহেরপুর। এ জেলায় প্রায় সবধরণের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। এবার জেলায় রবিশষ্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। এ অ লের মাটির গুনাগুন, অবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এটির চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে জেলার একমাত্র তৈলবীজ খামার আমঝুপিতে এর চাষ করা হয়েছে। সেই সাথে পালন করা হয়েছে মাঠ দিবস। অনেকেই আসছেন পরামর্শ নিতে। সূর্যমূখী চাষ হলে দেশের ভোজ্য তেলের ঘাটতি পুরুন হবে।
অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় ও অফিসের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সূর্যমুখী ফুল চাষ করে থাকেন। কিন্তু সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয় ভাবে উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভাল তেল। এটি শরীরের কোলষ্টোরেল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে তৈলবীজ খামারে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে এবার এ খামারে ২২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। সেই সাখে জেলায় আরো ২৭ বিঘা জমিতে এর চাষ করা হয়। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। অনেকেই আসছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পাশাপাশি এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন।
গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিডি দাস জানান, সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরল মুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশী পুষ্টি সমৃদ্ধ। শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। এককথায় সূর্যমুখী তেলে মানব দেহের মহাওষুধ হিসাবে ভূমিকা পালন করছে।
সরে জমিনে আমঝুপি বিএডিসি’র সূর্যমুখী ফুলের খামারে গিয়ে দেখা গেছে, দু’চোখ যতদুর যায় শুধু ফুলের সমারোহ। এ যেন হলুদ আর সবুজের মিলন মেলা। সূর্যদ্বয়ের সময় থেকে সূর্যঅস্ত পর্যন্ত সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এই ফুলটি। দিন দিন বিনোদনের স্থানগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বি ত হচ্ছে বিনোদন থেকে কিন্তু নতুন করে প্রকৃতির মাঝে এমন সৌন্দয্যর্ পরিবার পরিজন নিয়ে দেখতে এসে খুশি দর্শনার্থীরা। ঘুরে ঘুরে দেখছে সূর্যমূখী ফুলের সমারাহ। এমন সৌন্দর্যে ছবি ও ঘুরতে পেরে বেশ খুশি তারা। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পদচারনায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সূূর্যমূখি বাগান। নাটকের শুটিংও চলছে।
সেলফি তুলতে আসা ভাটপাড়ার সোহেলী ও আকতার জানান, লোকমুখে শুনেছি এখানে সূর্যমুখি ফুলের ক্ষেত আছে ও সুন্দর দৃশ্য তাই লোভ সামলাতে না পেরে এখানে ছবি তুলতে এসেছি। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সেলফি তোলা ছাড়াও ঘোরাঘুরি করা হচ্ছে। বেশ ভালই লাগছে। একই কথা জনালেন গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রি সুমনা ও রজনী।
নাটোর থেকে পিকনিকে আসা পর্যটকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা মুজিবনগরে এসেছিলেন। এখানে সৃর্যমুখির বাগান আছে আর তা দেখতে সুন্দর শুনতে পেয়ে বেড়াতে আসা। শুধু বিনোদন কেন্দ্রই নয়, এটি ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরুন করবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। অনেক টিকটকার জানান, এর আগে সূর্যমূখি ফুলের নাম শুনেছেন কিন্তু দেখেননি। এখন এই ফুলের সানিধ্যে পাচ্ছেন তারা। সোস্যাল মিডিয়ায় এই বাগান দেখে আসছেন তারা। এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে।
দেখতে আসা আগ্রহী কৃষক হোটেল বাজরের সঞ্জু জানান, দৃষ্টি নন্দন এই ফুল প্রকৃতিকে করেছে মনোমুগ্ধকর। অনেকেই ক্যামেরা বন্দী হচ্ছেন সুর্যমূখীর সাথে। তিনি তাঁর জমিতে এই ফুল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এখান থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। একই কথা জানালেন মেহেদী ও তোফায়েল আহমেদ।
মেহেরপুর বিএডিসির উপ—পরিচালক আবু তাহের জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যসুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তা ছাড়া অন্যান্য তৈল বীজ যেমন সরিষার, তিল এর চেয়ে তেলও বেশী পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা পুরুণে সুর্যমূখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানী করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে বিদেশ থেকে এর আমদানী কমে যাবে। এটি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০ থেকে ৬৫হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোস্তাফিজুর রহমান মির্জা। বার্তা সম্পাদক: নাদিম হাসান মির্জা। বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): নূর মিয়া। দৈনিক দিনের কণ্ঠ মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক কমর লেন, ফকিরাপুল, ঢাকা-১২২৩ থেকে প্রকাশিত এবং টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, এসএসবি প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত। মোবাইল নম্বর: ০১৬৪৪৭৯০০৭৯, পিবিএক্স ০৯৬৩৮৮৪৩৪৬২, ই-মেইল: info@dinerkantho.com, news@dinerkantho.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। | www.dinerkantho.com