মু. রিয়াজুল ইসলাম লিটন, ষ্টাফ রিপোর্টারঃ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারনে গেল কয়েক দিন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বলে খ্যাত সচিবালয়ে ছিল অনেকটাই নীরবতা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বেশির ভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচন শেষে যারা জয়ী হয়েছেন গত কয়দিন তাদের কেটেছে প্রথমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ, পরে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার পর আবারও শপথগ্রহণ শেষে দফতর বণ্টন নিয়ে। এই সময়টায় সচিবালয়ের সাধারণ কার্যক্রম চলেছে ধীরগতিতে।

মাঝে মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী সচিবালয়ে এলেও কিছু সময়ের

মধ্যে আবার চলেও গেছেন। বলা চলে নির্বাচনকালীন সময়টায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে সচিবালয় ছিল অনেকটই প্রাণহীন। মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পাওয়া পুরোনো এবং নতুন মন্ত্রীরা গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ করেছেন। এর আগে কে কে মন্ত্রি হচ্ছেন তা নিয়ে হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। মন্ত্রিত্ব পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর।

শুক্র ও শনিবার সরকারিভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন । তবে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শুক্রবার সকালে প্রথমে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর যান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। আর আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে।

আগামীকাল রোববার খুলছে অফিস আদালত। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে অফিস পাড়া। তবে সবচেয়ে বেশি কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে সচিবালয়ে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের এ দিন দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। কারণ নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রীরা এ দিন প্রথম তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে অফিস করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সচিবরা নতুন মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ে বরণ করে নিতে বেশি ব্যস্ত। তারা মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে মন্ত্রণালয়ে স্বাগত জানাবেন। এরপর বিভিন্ন দফতর থেকে আসা প্রধানদের নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।

আজ শনিবার সচিবালয়ে সব মন্ত্রণালয় বন্ধ থাকলেও কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের মন্ত্রণালয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীর কক্ষের দরজায় নেমপ্লেট লাগাবেন। এরই মধ্যে নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীদের সহকারী একান্ত সচিবরা (এপিএস) এসব বিষয়ে মনিটরিং শুরু করেছেন।

আজ নেম প্লেট নামিয়ে নতুন মন্ত্রীর নেমপ্লেট উঠানো হবে। এ ছাড়াও নতুন মন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য সকল ধরনের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আজ শনিবারই প্রস্তুত রাখা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রোববার সকাল ১০টা থেকে মন্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করবেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবরা মন্ত্রীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দফতরের প্রধানরা এদিন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ের কার্যপ্রণালির ওপর নির্ভর করছে।

মন্ত্রীদের আগমন ঘিরে রোববার সচিবালয়ে একদিকে ফুল দিয়ে বরণ উৎসবের পাশাপাশি মিডিয়াসহ অন্য শুভাকাক্সক্ষীদের পদচারণে মুখর থাকবে। সকাল ৯টার আগেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে হাজির হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কোনো ত্রুটি যেন কারও চোখে না পড়ে, সে জন্য সব মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রীরা এ দিন নিজ নিজ দফতরে মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে পরিচিত হবেন। পরে সচিবসহ দফতর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশেষ করে নতুন মন্ত্রণালয় পাওয়া মন্ত্রী ও নবাগত মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হবেন। মূলত নতুন ও পুরাতন মন্ত্রীরা এসব কর্মকাণ্ডে রোববার দিনব্যাপী সচিবালয়ে ব্যস্ত সময় পার করবেন। আগামীকাল সচিবালয়ে প্রবেশ করবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গাড়িবহর। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র রমন্ত্রণালয়ের স্টিকার ছাড়া সচিবালয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশের অনুমতি নেই। এ দিন সচিবালয়ে যাতে কোনো ধরনের যানজট সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা শাখা থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল থেকেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাজের কার্যক্রম শুরু হবে।

চলতি সপ্তাহেই একনেক, অর্থনৈতিক-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা, ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা, জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এ ছাড়াও নতুন ও পুরাতন মন্ত্রীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ফাইল নতুন করে খুলতে হবে।

আগামী সোমবার নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আপাতত তা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় তার সুবিধা অনুযায়ী প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। যেখানে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের আগামী দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

আশা করা হচ্ছে নতুন মন্ত্রীদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন আগামীকাল রোববার সচিবালয়ের পরিবেশ হবে একেবারে অন্য ধরনের