ঢাকা, শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, 

শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫
জাতীয়শূন্যরেখায় বৈদ্যুতিক পিলারে সার্চলাইট বসালো বিএসএফ

শূন্যরেখায় বৈদ্যুতিক পিলারে সার্চলাইট বসালো বিএসএফ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ধবলসুতি গাটিয়ার ভিটা সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বৈদ্যুতিক পিলার (খুঁটি) স্থাপন করে তাতে সার্চলাইট বসিয়েছে বিএসএফ। পরে বিজিবির বাধায় তারা কাজ বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ধবলসুতি ঘাটিয়ার ভিটা সীমান্ত এলাকার প্রধান পিলার ৮২৯ এর ৪ নম্বর উপ-পিলারের কাছে শূন্যরেখার মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান করে বিজিবি। সম্প্রতি সময়ে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের অন্যায়ের প্রতিবাদে স্থানীয় কৃষক-দিনমজুরসহ সর্বস্তরের শত শত সাধারণ দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। সীমান্তের সাধারণ মানুষ লাঠি, রামদা, কাস্তের মতো অস্ত্র হাতে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে বিজিবির জওয়ানদের পাশে দাঁড়ায়। একই সাথে সীমান্তে ব্যাংকার করতেও কঠোর পরিশ্রম করেন তারা। ভারত সাময়িক কাঁটাতারের বেড়া দেয়া বন্ধ করলেও সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সর্তক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি-বিএসএফ সদস্যরা।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী তথা বিএসএফ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে কখনোই বন্ধুসুলভ আচরণ করেনি। বিএসএফের গুলিতে ফেলানী হত্যার দগদগে ক্ষত আমাদের বুক থেকে এখনো শুকায়নি। মস্তিষ্ক থেকে শোকের মাতম এখনো হারায়নি। ভারতের সাথে বাংলাদেশ ভিন্ন অন্যান্য যে সকল দেশের সীমান্ত সংযোগ আছে সে সকল দেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হত্যার সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি। এমনকি কোথাও কোথাও ফাঁকা আওয়াজ করতেও ভয় পায় ভারত। অথচ গত ১৬ বছরে বিএসএফের গুলিতে ভারত বাংলাদেশের ছয় শতাধিক মানুষকে সীমান্তে হত্যা করেছে। এ সময় বিএসএফয়ের মুখস্থ বয়ান হিসেবে নিহতদেরকে চোরাকারবারি, গরু পাচারকারী কিংবা নেশাজাত দ্রব্য বহনকারী হিসেবে তকমা দেওয়া হয়েছে। গুলিতে প্রাণ হারানো নিরীহ মানুষ, কৃষক কিংবা শ্রমিককে মিথ্যা অপবাদের দায় মাথায় নিয়েই থাকতে হয়েছে বাংলাদেশী মানুষকে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে জমিতে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়রা বৈদ্যুতিক পিলার ও সার্চলাইট স্থাপন দেখতে পেয়ে বিজিবিকে খবর দেন। পরে ৬১ বিজিবি (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈদ্যুতিক পিলার দেখতে পান। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বিএসএফের ৯৮ ব্যাটালিয়নের ফুলকাডাবরী ক্যাম্পের সদস্যরা দেশটির নির্মাণশ্রমিকদের নিয়ে বৈদ্যুতিক পিলার স্থাপন করেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, বিএসএফ গায়ের জোরে শূন্যরেখার মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারে সার্চলাইট স্থাপন করছে। রাতে তারা শূন্যরেখায় এসে পাহারা জোরদার করছেন। এতে আমরা গ্রামবাসী আতঙ্কিত। এ বিষয়ে বিজিবি ধবলসুতী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মাহবুব বলেন, আমাদের বাধা উপেক্ষা করে বিএসএফ বৈদ্যুতিক পিলার স্থাপন করে চলে যায়। পরে আমরা তাদের ডাকলেও তারা শোনেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান করা হয়েছে। তবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ৬১ বিজিবি তিস্তা-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুমকে পাওয়া যায়নি।

একাধিক সূত্র বলছে, দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্ত, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্ত, নওগাঁর বস্তাবর সীমান্ত ও সিলেট সীমান্তে কাটাতারের বেড়া দেয়া বা মদের খালি বোতল ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে এবং সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে সবার একাট্টা হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আজ সারা বিশ্ব দেখছে। সীমান্ডের সাধারণ মানুষের দেশপ্রেম ও সাহসিকতায় বলিয়ান হয়ে অনেকটাই আজ জেগে উঠেছেন বিজিবির সদস্যরা। তারাও বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিকদের অন্যায়ভাবে সীমান্ত দখল, কাটাতাঁরের বেড়া দেয়া এবং বাংলাদেশী কৃষকের ফসল ক্ষতির প্রতিবাদ করছেন।

একটি মন্তব্য করতে পারেন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

আরও খবর

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ