ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, 

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ রাশিয়া

ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর দিয়েছে। আর এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিদায়ের আগে ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা গত রোববার এএফপিকে বলেন, যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার জন্য উত্তর কোরিয়ার কয়েক হাজার সেনা মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া।

রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য আন্দ্রেই ক্লিসাস বলেন, পশ্চিমারা উত্তেজনা এমন মাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে, যা এক রাতের মধ্যে ইউক্রেনের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে কিয়েভ যদি রাশিয়ায় হামলা চালায়, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।

বিবিসি জানিয়েছে, ইতিপূর্বে কিয়েভকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছিল ওয়াশিংটন। তবে এত দিন রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি ছিল না। সূত্রগুলো বলছে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি পাওয়ায় আসন্ন দিনগুলোতে রাশিয়ায় দূরপাল্লার হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন।

কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র (এটিএসিএমএস নামে পরিচিত) ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে আসছিলেন, যাতে করে কিয়েভ নিজ সীমানার বাইরে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারে। এটিএসিএমএস ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর দুই মাসের মতো ক্ষমতায় আছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতি বদলে যেতে পারে। তাই আগেভাগেই কিয়েভকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এক্সে লিখেছেন, ‘মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স মনে হয় এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, আমার বাবা শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করবে।’

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগেই এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হবে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণের’ শামিল।

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে গত আগস্টে ব্যাপকভাবে অভিযান চালায় ইউক্রেনীয় বাহিনী। বর্তমানে ইউক্রেনীয় সেনারা সেখানে অবস্থান করছে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যেকোনো আলোচনায় এটি দর-কষাকষির একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ইতিপূর্বে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সেরহি কুজান বিবিসিকে বলেন, ‘বাইডেনের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হয়তো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করবে না, তবে এটি আমাদের বাহিনীকে প্রতিপক্ষের আরও সমান্তরাল করে তুলবে।’ তিনি বলেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সেনারা কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের হটাতে যে অভিযানের পরিকল্পনা করেছে, তার আগেই রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সামনে এল।

ইউক্রেন এর আগে জানিয়েছিল, কুরস্ক অঞ্চলে ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনাসদস্য থাকতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের জন্যও এখন ইউক্রেনকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। যদিও দেশ দুটির পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।

একটি মন্তব্য করতে পারেন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

আরও খবর

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ